চক্রান্ত করছে অমিত শাহ : নির্বাচনী জনসভায় তোপ মমতা বন্দ‍্যোপাধ‍্যায় এর

9th April 2021 11:08 pm বর্ধমান
চক্রান্ত করছে অমিত শাহ : নির্বাচনী জনসভায় তোপ মমতা বন্দ‍্যোপাধ‍্যায় এর


প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় ( বর্ধমান ) :  ‘আমার মনে হচ্ছে বাংলায় যেন ৩৫৬ জারি করে দিয়েছে ।আমাদের কথা একটাও শুনছে না।  শুধু বিজেপি যা বলছে তাই করছে । সব চক্রান্ত করছে অমিত শাহ । তবে যাই করুক বিজেপি জিতবে না । বাংলায় বিজেপি একটা আশনও পাবে না ’। পূর্ব বর্ধমান জেলায় প্রথম নির্বাচনী জনসভায় যোগ দিয়ে কমিশন ও বিজেপির উদ্দেশ্যে এই ভাবেই চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যেপাধ্যায়।এদিন জেলার জামালপুর ,মেমারি ও বর্ধমানের জোতরামে অনুষ্ঠিত তৃণমূলের জনসভায় যোগ দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কমিশন ও বিজেপির বিরুদ্ধে  তীব্র ক্ষোভ উগরে দেন । 


এদিন জামালপুর বিধানসভার সেলিমাবাদ ফুটবল মাঠে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রথম নির্বাচনী জনসভাটি হয় ।বেলা ১১ টায় সভা শুরুর কথা থাকলেও মুখ্যমন্ত্রী দেরিতে পৌছানোয় সভা ১২ নাগাদ শুরু হয় । জামালপুর বিধানসভার তৃণমূল প্রার্থী অলোক মাঝি ও রায়নার তৃণমূল প্রার্থী শম্পা ধারা সভায় উপস্থিত থাকেন। এরপরের সভাটি হয় মেমারি ও মন্তেশ্বের তৃণমূল প্রার্থী মধুসূদন ভট্টাচার্য ও সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীর সমর্থনে 
 মেমারির গন্তারে ।বিকালে বর্ধমান উত্তর ও দক্ষিন বিধানসভার প্রার্থী নিশীথ মালিক ও খোকন দাসের সমর্থনে জোতরাম স্কুল মাঠে শেষ সভাটি অনুষ্ঠিত হয় ।  


তৃণমূলের প্রতিটি নির্বাচনী জনসভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নাম না করে কমিশন এবং  বিজেপিকে তীব্র আক্রমণ করেন । তিনি বলেন , বিজেপি দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করে দিয়েছে । ২ কোটি বেকার বাড়িয়েছে । দেশের সম্পত্তি বিক্রি করে দিচ্ছে । রেল ,এয়ার ইন্ডিয়া বিক্রি করে দিচ্ছে।ইনসিওরেন্সের ৭৫ শতাংশ বিক্রি করে দিচ্ছে ।  । আগামীদিনে ইনসিওরেন্সের টাকা পাবেন না । ব্যাঙ্কে জমানো টাকা আমানতকারীরা পাবেন কিনা কারুর জানানেই ।কেন্দ্রের বিজেপি সরকার স্বল্প সুদে সঞ্চয় কমিয়ে দিয়েছে । ব্যাঙ্কে সঞ্চয়ে সুদ কমিয়ে দিয়েছে । গ্যাস ও কেরোসিনের দাম বহুগুন বাড়িয়ে দিয়েছে । মমতা এদিন দাবি করেন ,’ বিজেপি কিছু দেয় না । শুধু মিথ্যা কথা বলে । আসলে বিজেপি  দেশটাকেই বিক্রী করে দিতে চাইছে । সভায় উপস্থিত মানুষজনকে উদ্দেশ্য করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন ,বাংলায় তৃণমূল না থাকলে সব বন্ধ হয়ে যাবে । কিছু আর পাবেন না। তৃণমূল ক্ষমতায় থাকলে ভবিষ্যৎতের জন্য 
আর চিন্তা করতে হবে না বলে মমতা জানিয়ে দেন’ । পাশাপাশি তৃণমূল নেত্রী সভায় উপস্থিত মানুষজনকে  স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, অসমে এনপিআর করে ১৪ লক্ষ লোককে ডিটেশন ক্যাম্পে যেমন রেখেছে বিজেপি বাংলায় ক্ষমতায় এলে তেমনই রাখবে। ওদের কথা যদি শোনেন আধার কার্ড থেকে নামটা বাদ যাবে ।ডিটেনশন ক্যাম্পে  হিন্দু অনেক আছে , শুধু মুসলমান একা নেই । তাই বিজেপিকে বাংলায় ঠাই না দেওয়ার জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আবেদন রাখেন । একই সঙ্গে বলেন ,দুই গুজরাটি রাজ্যে এসে উস্কানি দিচ্ছে । এজেন্সিকে ব্যবহার করে একে কেস দিচ্ছে, ওকে কেস দিচ্ছে । 
   

ভোট প্রক্রিয়া ও নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়েও জনসভা থেকে ক্ষোভ ব্যক্ত করেন  মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ।  তিনি বলেন , প্রধানমন্ত্রী এত উল্টোপাল্টা কথা বলছেন তাতে ’কোড ভায়লেট ’ হয়না ।  আমিত শাহ রোজ যা ইচ্ছে তাই বলে যায় । তাতেও ‘কোড ভায়লেট’  হয় না । অথচ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বক্তব্য দিলেই ‘কোড ভায়লেট ’ হয়েযায় ।অনেক অত্যাচার চলছে ।  তৃণমূল কংগ্রেস কে ‘খতম করার জন্যে । ’ক্যাম্পেন পর্যন্ত করতে দেয় নি । মমতা দাবি করেন ,যাই করেন তৃণমূল কংগ্রেসকে খতম করতে পারবেন না । কারণ তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে মানুষ রয়েছে ।  একই সঙ্গে মমতা  বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন স্পষ্ট জানিয়ে দেন, সিআরপিফ ও সিআইএসএফ কে আমি ততক্ষণ বলেবো যতক্ষণ ওরা বিজেপি করবে ।আর  বিজেপি না করলে আমি ওদের স্যালুট করবো ।“ তৃণমূল নেত্রী অভিযোগ করেন, বিজেপি গায়ের জোরে এখন অশান্তি করছে । আর তাতে মদত দাতা রয়েছে কিছু তাঁবেদার। তার জন্যই বৃহস্পতিবার মাথাভাঙার তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী গিরিন্দ্রনাথ বর্মণ কে মারধোর করেছে ।সে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। আরামবাগে তৃণমূল প্রার্থী সুজাতা খাঁ আক্রান্ত হয়েছে । মেরে তাঁর সিকিউরিটির মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছে । গোঘাটে মানসকেও মরেছে । নন্দীগ্রামে যে ছেলেটার আক্রান্ত হওয়ার কথা আমি বার বার বলেছি সেই ছেলেটা এদিন মারা গেছে । বিজেপি ওকে মেরেছে বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন জনসভা থেকে দাবি করেন । 


কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী তথা নরেন্দ্র মোদীর সেনাপতি অমিত শাহ কে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেন তৃণমূল সুপ্রিমো । তিনি বলেন ,“ অমিত শাহ কে আমি স্যালুট করি না । শুধু তাই নয় অমিত শাহকে উদ্দেশ্য করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন ,চোখ গুলো দেখলেই মনে হয় দাঙ্গা করে খেতে আসছে । গুজরাটে দাঙ্গা করে দিল্লিতে পালালো । দিল্লিতে দাঙ্গায় কতজনকে মারলো কেউ তা জানতে পারলো না“ । তৃণমূল  নেত্রী এদিন জনসভা থেকে সংবাদ মাধ্যমকেও এক হাত নেন । তিনি বলেন ,বিজেপি মিডিয়াকেও পুরোপুরি কিনে নিয়েছে । সংবাদ মাধ্যমকে ওরা বলছে , যা বলবো তাই বলবে । মুখ্যমন্ত্রী বলেন ,তিনি এই সব কিছুই জানেন । মেমারির জনসভা থেকে অমিত শাহকে তীব্রভাষায় আক্রমন করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন , ভোটে হেরে যাবে বলে অমিত শাহ প্ল্যান  করে  অশান্তি করাচ্ছে।  মমতা বলেন ,কিসের হোম মিনিস্টার দেশের কাজ না করে সারাক্ষণ বাংলায় চক্রান্ত করবে ,গুন্ডামি করবে ,বাংলায় লোক মারবে  খুন করাবে! অন্য পুলিশদের অসৎ পথে নিয়ে যাচ্ছে অমিত শাহ ।  প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে বলবো প্রথমে আপনার হোম মিনিস্টার কে কন্ট্রোল করুন ।

 





Others News

MEMARI . একবছর আগে আবেদন করেও মেলেনি জাতিগত শংসাপত্র : হন‍্যে হয়ে ঘুরছেন মা

MEMARI . একবছর আগে আবেদন করেও মেলেনি জাতিগত শংসাপত্র : হন‍্যে হয়ে ঘুরছেন মা


প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় ( বর্ধমান ) : প্রায় এক বছর আগে আবেদন করেও মেয়ের জাতিগত শংসাপত্র মেলেনি । আবেদনকারীদের জাতি শংসাপত্র দেওয়ার
ক্ষেত্রে দেরি করা যাবেনা বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।কিন্তু বাস্তবে ঠিক তার উল্টোটাই ঘটে চলেছে।প্রায় এক বছর আগে  চতুর্থ শ্রেণীতে পাঠরত মেয়ের ওবিসি শংসাপত্র পাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে  আবেদন করেছিলেন মা।কিন্তু মেয়ে কে পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তির সময় এগিয়ে আসলেও জাতি  শংসাপত্র আজও না মেলায় কার্যত হতাশ হয়ে পড়েছেন পূর্ব বর্ধমানের মেমারির রাধাকান্তপুর নিবাসী ঊর্মিলা দাস।ওবিসি শংসাপত্র পাবার জন্য ঊর্মিলাদেবী বৃহস্পতি বার মেমারি ১ ব্লক বিডিও অফিসে লিখিত ভাবে আবেদন জানিয়েছেন। শংসাপত্র পাবার জন্য বিডিও সাহেব কি ব্যবস্থা করেন সেদিকেই এখন তাকিয়ে ঊর্মিলাদেবী। 

বিডিওকে লিখিত আবেদনে ঊর্মিলাদেবী জানিয়েছেন ,তাঁর স্বামী মানিক দাস দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধী ।বছর ১০ বয়সী তাঁদের একমাত্র কন্যা গ্রামের বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণীতে পাঠরত কালে তাঁর ওবিসি শংসাপত্র পাবার জন্য তিনি নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারী আবেদন করেছিলেন।  উর্মিলাদেবী বলেন ,তার পর থেকে দীর্ঘ সময় পেরিয়ে  গেলেও তিনি তাঁর মেয়ের ওবিসি শংসাপত্র পান না।মেয়ের পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তির সময় এগিয়ে আসায় গত অক্টোবর মাসের শেষের দিকে তিনি শংসাপত্রের বিষয়ে মেমারি ১ ব্লকের বিডিও অফিসে খোঁজ নিতে যান।জাতি শংসাপত্র বিষয়ের বায়িত্বে থাকা বিডিও অফিসের আধিকারিক তাঁকে অনলাইনে এই সংক্রান্ত একটি নথি বের করে আনতে বলেন । অনলাইনে সেই নথি বের করেনিয়ে তিনি ফের ওই আধিকারিকের কাছে যান । তা দেখার পর ওই আধিকারিক তাঁকে  ২০ দিন বাদে আসতে বলেন । ঊর্মিলাদেবী বলেন , তিনি ২৫ দিন বাদে যাবার পর ওই আধিকারিক তাঁকে গোপগন্তার ২ গ্রাম পঞ্চায়েতে গিয়ে খোঁজ নেবার কথা বলেন । তিনি এরপর গ্রামপঞ্চায়েত অফিসে খোঁজ নিতে যান । নথি ঘেঁটে পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেয় তাঁর মেয়ের নামে কোন ওবিসি শংসাপত্র পঞ্চায়েতে আসে নি।ঊর্মিলাদেবী দাবী করেন ,এই ভাবে তিনি একবার বিডিও অফিস , আবার পঞ্চায়েত অফিসে দরবার করে চলেন । কিন্তু তাতে কাজের কাজ কিছু হয় না। মেয়ের ওবিসি শংসাপত্র পাবার জন্য  গত ১৩ ডিসেম্বর ফের তিনি বিডিও অফিসে যান ।ওই দিনও বিডিও অফিসের জাতি শংসাপত্র বিষয়ক বিভাগের আধিকারিক তাঁকে একই ভাবে পঞ্চায়েত অফিসে খোঁজ নিতে যেতে বলে দায় সারেন। পরদিন তিনি পঞ্চায়েত অফিসে খোঁজ নিতে গেলে পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ ফের জানিয়ে দেয় তাঁর মেয়ের নামে  ওবিসি শংসাপত্র পঞ্চায়েতে আসে নি । কেন মেয়ের জাতি শংসাপত্র পাচ্ছেন না সেই বিষয়ে  না পঞ্চায়েত না ব্লক প্রশাসনের কর্তৃপক্ষ কেউই তাঁকে কিছু জানাতে পারেন । ঊর্মিলাদেবী বলেন ,পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তির আগে তার মেয়ে যাতে ওবিসি শংসাপত্র পেয়ে যায় তার ব্যবস্থা করার জন্য এদিন তিনি বিডিওর কাছে লিখিত ভাবে আবেদন জানিয়েছেন । মেমারী ১ ব্লকের বিডিও আলী মহম্মদ ওলি উল্লাহ এদিন বলেন ,“জাতি শংসাপত্র পাবার জন্য হাজার হাজার আবেদন জমা পড়ছে । তবে ঊর্মিলাদেবীর কন্যা দ্রুত যাতে বিবিসি শংসাপত্র দ্রুথ পান সেই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে “। মেমারির বিধায়ক মধুসূদন ভট্টাচার্য্য বলেন,’মেমারি  বিধানসভা এলাকার আবেদনকারীরা দ্রুত যাতে জাতি শংসাপত্র পান সেই বিষয়ে প্রশাসনকে আরও তৎপর হওয়ার কথা বলবো’।